গণফোরামে দুই সাংসদের শপথ নিয়ে দ্বিমত

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও এ বিষয়ে দ্বিমত দেখা দিয়েছে দলে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল আছে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।

দল শপথ নেওয়ার বিপক্ষে কথা বললেও নির্বাচিত দুই সদস্য বলছেন, তারা শপথ নিতে চান। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলেই শপথের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মুকাব্বির খান।

বিবৃতিতে মন্টু বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তথা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য সুদৃঢ় ও অটুট আছে। তিনি বলেন, গণফোরাম তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে যোগদান করছেনÑ এ ধরনের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা অসত্য ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো সংসদ সদস্যের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।

মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মনসুর বলেন, সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে বলার কী আছে। এটা তো ইতিবাচক হবেই। জোটের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ড. কামাল হোসেন আগেই বলেছেন, শপথের ব্যাপারটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এখন ঐক্যফ্রন্ট কী করবে, তা বলতে পারবেন কেবল দলপ্রধান। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তিনি বলেন, জনগণ শত প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখা আমার দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা আগের মতোই ইতিবাচক থাকবে। সিলেট-২ আসনে বিজয়ী গণফোরামের প্রার্থী মুকাব্বির খানও শপথ নেবেন বলে জানান। তবে শপথের সম্ভাব্য কোনো দিন ও তারিখ তিনি বলেননি।

সুলতান মনসুর বলেন, শপথ নেওয়ার তারিখ তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। শপথ নেওয়ার এখনো ৯০ দিন বাকি আছে। আর আমরা তো কখনো শপথ নেব না বলিনি। কবে শপথ নেব না-নেব তা সময়ই বলে দেবে। তিনি আরও বলেন, ড. কামাল হোসেনও বলেছেন শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। আর এটাই আমাদের কথা। এর বাইরে অন্যরা কে কী বলেছে, তা আমি জানি না।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, তাদের ভোটের সেই মর্যাদা আমাদের দিতে হবে। আমি শপথ নেওয়ার ব্যাপারে পজিটিভ। আমার যে দায়িত্ব, তা আমি পালন করবই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আওয়ামী লীগে আবার ফিরে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে সুলতান মনসুর বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার পরে এসব বিষয়ে কথা বলব।

সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মুকাব্বির খান বলেন, শপথ নেওয়ার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। অবশ্য আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন এর আগে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন ইতিবাচক। ফলে আমরা ধারণা করছি শপথ নেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে আমরা এখনো অটল।

সুলতান মোহাম্মদ মনুসর ও মোকাব্বির খান দুজনই গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য, দুজনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। সেভাবেই তারা নির্বাচন করেছে। একজন ধানের শীষ নিয়েছেন, আরেকজন সুযোগ পাননি বলে দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সমর্থনে নির্বাচন করেছেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সংসদে না যাওয়ার, শপথ না নেওয়ার। এর পরে কী ব্যত্যয় ঘটবে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

শপথ না নেওয়ার বিষয়ে শুধু সুব্রত চৌধুরী নন, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতেই ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা এই প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি। নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবি করছি। এর পর ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য শপথ নেবেন না।

ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি। ড. কামাল হোসেন দেশে এলে বৈঠক করে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।

গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে নির্বাচিতরা শপথ না নেওয়ার বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে শপথগ্রহণ করবেন কিনা এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এখনো বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ আছে। যে কোনো বিষয়ে বসে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।